চোখ চুরি কান্ডে মা-কে চাকরীর নিয়োগপত্র প্রদান
দাবদাহ লাইভ, বৈশাখী সাহা, কলকাতাঃ মৃত এক যুবকের ‘চোখ চুরি’র অভিযোগ তুলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ চলাকালীন ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রীর আগমন ঘটে। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকে চলে বিক্ষোভ। সমস্যার সমাধান স্বরূপ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার পাশাপাশি, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্তান হারা মায়ের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেয় পুলিশ প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্দেশ অনুযায়ী বারাসাতে মৃত যুবকের মায়ের হাতে বুধবার চাকরির নিয়োগ পত্র তুলে দেয় রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। মৃতের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা কৃষ্ণা দেবীর হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বারাসাত রেঞ্জের ডিআইজি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বারাসাত জেলা পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খরিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জোনাল) অতীশ বিশ্বাস সহ অন্যান্য পুলিশ কর্তারা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জোনাল) অতীশ বিশ্বাস বলেন, পরিবারের লোকেরা থানায় একটি আবেদন পত্র ও বায়োডাটা জমা করেছিলেন। সেটাই ফরওয়ার্ড করে দেওয়া হয়। “ভূমি রাজস্ব দপ্তরে চাকরির নিয়োগ পত্র তুলে দেয়া হয়েছে। ‘ক্ষতিপূরণ প্রদাণ’ বিষয়টির প্রক্রিয়া শুরু করেছি।” ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানান তিনি। এদিকে ‘মর্গ কান্ড’ প্রসঙ্গে বারাসাত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমএসডিপি ডাক্তার অভিজিৎ সাহা বলেন, মৃতের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে যাতে মামলা রুজু হয়, তার জন্য অভিযোগ পত্রটি বারাসাত জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী মৃত যুবকের ‘চোখ চুরি’র অভিযোগ খতিয়ে দেখতে, ডঃ অরিন্দম চক্রবর্ত্তীর নেতৃত্বে ৩ জন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বুধবার দ্বিতীয়বার মৃতদেহটির ময়নাতদন্ত হয়। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা পড়বে স্বাস্থ্য ভবনে। পুলিশের কাছেও পাঠানো হবে একটি কপি।” ময়নাতদন্ত শেষে ডঃ অরিন্দম চক্রবর্ত্তী জানান, “আইন মেনে ভিডিওগ্রাফি সহ দ্বিতীয় বার ময়না তদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট মুখ বন্ধ খামে জমা দেওয়া হবে। পরিবারকেও রিপোর্টের কপি দেওয়া হবে।” ময়নাতদন্ত শেষে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বুধবার রাতেই কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে মৃতদেহটির সৎকার্য সম্পন্ন হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার সকালে পথচলতি বারাসাত ১ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন কাজীপাড়ার নেতাজি নগরের বাসিন্দা ৩৫ বছরের প্রীতম ঘোষকে কাজী পাড়া রেলগেট সংলগ্ন যশোর রোডে একটি ছোট মালবাহী গাড়ি সজোরে ধাক্কা মারলে গুরুতর জখম হয় সে। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বারাসাত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এরপরই ময়নাতদন্তের জন্য দেহ বারাসাত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের পক্ষ থেকে দেহটি আনতে যায়। মৃতের মুখের দিকে নজর পড়তেই ঘটে বিপত্তি। দেহ থেকে ‘চোখ চুরি’র অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করে পরিবার। স্থানীয় ও পরিবারের দাবি, দুর্ঘটনার পর প্রীতমকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনও তাঁর চোখ দুটো অক্ষত ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা দেখেন মৃতের একটি চোখ নেই। এরপরই ওই হাসপাতালের মর্গ থেকে ‘চোখ চুরি’র অভিযোগ তুললে, হাসপাতালের তরফে জানানো হয়- ‘ইঁদুর চোখ নিয়ে গিয়েছে’। সেই কথা মানতে নারাজ মৃতের পরিবার পরিজনেরা। এরপরই ক্ষোভে যশোর রোড অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। আর ওই দিনই দুপুরে বনগাঁর ত্রিকোন পার্কে এসআইআর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন মমতা। সভা শেষে চাঁদপাড়া থেকে ঠাকুরনগর প্রায় ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত মিছিল সেরে সড়ক পথে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বারাসাতে পৌঁছাতেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। বারাসাতের বনমালীপুর হাসপাতাল গেটের সামনে যশোর রোডের উপর মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় মৃতের পরিবারের থেকে গোটা ঘটনা শোনার পর, ঘটনাস্থলেই মাইক মারফত মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ‘ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। যদি অপরাধ সত্যি প্রমাণিত হয়, কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এছাড়াও আর্থিক ক্ষতিপূরণ সহ মৃতের মা-কে চাকরি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর অবরোধ উঠে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের সামনে মৃত যুবকের এক আত্মীয় বলেন, “ইঁদুর যদি চোখ উপরে নেবে, তাহলে শরীরের অন্যান্য অংশ কিভাবে অক্ষত রয়েছে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলুক সত্যিটা কি? যদি তাঁরা চোখ কাউকে দান করে থাকে সেটাও স্পষ্ট করে জানাক। ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে লাশ কাটা ঘরে চোখে তুলসী পাতা দেওয়া হয়- এমনটা কেউ কোথাও কখনও শুনেছে? আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।”
নিউজ এক ঝলকে
চোখ চুরি কান্ডে মা-কে চাকরীর নিয়োগপত্র প্রদান
98%


















