৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট বনগাঁয়
দাবদাহ লাইভ, প্রভাস বিশ্বাস : বনগাঁ, শনিবার,২০ জুলাই: প্রতাপ গড় স্পোটিং ও বনগাঁ পৌরসভা পরিচালিত ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে বাবুল স্মৃতি ব্যায়ামাগার ৪-১ ব্যবধানে ট্যাংরা কলোনি জাগৃতি ইভেন্টকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে। সেই সাথে পেল ৭৫ হাজার টাকা আর রানার্স ৫০ হাজার টাকা। খেলার প্রাক মুহূর্তে ঝমঝমিয়ে এক পশলা বৃষ্টিতে প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠের দফারফা। বারে বারে খেলোয়াড়েরা থেই হারিয়েছে যার ফল স্বরূপ কখনো বা দিশাহীন শট এসেছে তাদের পা থেকে। খেলার ১২ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি বক্সে সুরাজ সিং এর কাছে এলে গড়ানো শটে ট্যাংরার গোলকিপার আফ্রিদি মন্ডল এর বাম পাশ দিয়ে বার ঘেসে বাইরে বেরিয়ে যায়। কুড়ি মিনিটে ফের আক্রমণ বাবুল স্মৃতির, বিদেশীর ইয়োইয়োর বাম পায়ের শট কিপারের বাম পাশ দিয়ে জাল নাড়িয়ে দেয়( ১-০)। বল পেয়ে এক মিনিটের মাথায় ট্যাংরা অতর্কিত আক্রমণ করে। সুদীপের কাছে বল এলে জালে ঠেলে দিয়ে বরাবর করে। ফলাফল ১-১ হয়। অ্যাটাক কাউন্টার অ্যাটাকে খেলা চললেও ২৮ মিনিটে ফের আচমকা আক্রমণে বাবুল স্মৃতির সুরাজ সিং গোল গোল করে ব্যবধান বাড়ায় (২-১) । সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক সহ সারা টুর্নামেন্টে ভালো খেলার সুবাদে ম্যান অফ দ্যা সিরিজের শিরোপা তার মুকুটে। প্রথম অর্ধের অতিরিক্ত সময়ে বিদেশি ইয়োইয়ো গোল করে ব্যবধান আরো বাড়িয়ে নেয় (৩-১) । দ্বিতীয় অর্ধে ট্যাংরার বার কয়েক আক্রমণ ভোঁতা হয়েছে। কখনো বা দিশাহীন শট বার উচিয়ে মাঠের বাইরে। বক্সে রাফটা ট্যাকেল করে ট্যাংরা। নজর এড়ায়নি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রেফারী রবিন বিশ্বাসের। তৎক্ষণাৎ পেনাল্টির বাঁশি বাজায়। মৃদু প্রতিবাদেও ভাবলেহীন, সিদ্ধান্তে অবিচল রবীন বিশ্বাস। পরিচ্ছন্ন প্লেয়ার বিদেশি ইয়োইয়ো ঠান্ডা মাথায় কিপার তথা ক্যাপ্টেন আফ্রিদি মন্ডলকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে যাবার সাথে সাথেই তার নামের পাশেও হ্যাটট্রিক(৩) শব্দটা জড়িয়ে গেল। স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে চ্যাম্পিয়ন বাবুল স্মৃতি ৪ ও ট্যাংরা কলোনি -১, র্শকের কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেল। হঠাৎ করে আসা বৃষ্টিটা না এলে আরো ভালো খেলা উপহার পেতো দর্শককুল। তবুও সারা মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দর্শক উপভোগ করলো – লাইনে থাকা রেফারি তরুণ বিশ্বাস টুকরো টুকরো কথায় এমনটাই জানালেন। ‘ অন্য রেফারি বাসুদেব পাল জানালেন, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আধিপত্য রেখেই বাবুল স্মৃতি ব্যায়ামাগার জয়ী হলেও বার কয়েক ট্যাংরা কলোনির ফলপ্রসু আক্রমণ দিশাহীন শটে পরিণত, এক্ষেত্রে ভিজে মাঠও একটা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল । তবে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। বাবুল স্মৃতির সম্পাদক সঞ্জয় তরফদার জানালেন, গত বছর আমরা খেলায় অংশগ্রহণ করিনি। তার আগেরবার ২০২২ সালে সেমিফাইনালে বিদায় নিতে হয়েছিল। এবার আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছিলাম আমরা। এনেছিলাম স্টপার , মিডফিল্ডার ও ফরওয়ার্ডের তিন বিদেশিকে। যার কারনে ‘এবারে আমরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলাম। প্রায় প্রতি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে আমরা প্রতিপক্ষকে হারিয়েছি।সেমিফাইনালে জয়পুর ফুলতলাকে ৬ -০ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠি । দলের স্তম্ভ সুরাজ সিং এ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে। টুর্নামেন্টের অন্য ম্যাচগুলোতে প্রথম হাফ ভালো খেললেও দ্বিতীয় অর্ধে যেন কিছুটা মিইয়ে পড়তো। ছেলেদের বারে বারে একটা কথাই বলে এসেছি, ফাইনাল ম্যাচে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একই গতিধারা নিয়ে খেলো। শুধু সুরাজ সিং বা বিদেশি নয় দলের সবাইই উজাড় করে দিয়েছে যার ফল চ্যাম্পিয়নের তকমা।’ ট্যাংরার সাধন বিশ্বাস জানালেন, আমরা লীগ পর্যায়ের প্রথম ম্যাচে ১-১, দ্বিতীয় ম্যাচে ২-১, তৃতীয় ম্যাচে ০-০,আর সেমিফাইনালে হ্যাপি চাইল্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছাই। এই হ্যাপি চাইল্ড আবার টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই বাগদাকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল। তবে টুর্নামেন্টে ভালো দল হিসাবেই বাবুর স্মৃতি অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো। বৃষ্টিটা নাহলে আরো ভালো খেলা উপভোগ করতে পারতো দর্শক। পৌরপিতা গোপাল শেঠের উদ্যোগেই এই টুর্নামেন্ট। অভিনন্দিত করলেন উভয় দলকেই। খেলোয়ারদের কথা ভেবেই আগামীতে আরো ভালো টুর্নামেন্ট যাতে করা যায় তার উদ্যোগ নেবেন বলে জানালেন। বনগাঁ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সেক্রেটারি সুনীল সরকার জানালেন, একটা সময় ছিল যখন স্টেডিয়াম তৈরি হয়নি দর্শক খেলা দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকতো। খেলা দেখার জন্য মানুষ মুখিয়ে থাকতো। সেই সময়টা অন্যরকম ছিল। টিকিটের জন্য হাহাকার পড়ে যেত। বর্তমানে স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে কিন্তু সেই হিসাবে উৎসাহী হয়নি দর্শক। তবুও কখনো কখনো মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। আরো দর্শক মাঠে এসে খেলা উপভোগ করুক। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় খেলোয়াড় মেহেতাব হোসেন। ফুটবল জার্সি পরিহিত ছোট ছোট শিশুদের দেখে জানালেন, এই সময়ে ভালো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। অনেক খেলোয়াড়ী কলকাতা মুখি হতে পারবে। তবে সবাই ভালো খেলোয়াড় না তৈরি হলেও ভালো মানুষ তৈরি হবে। নিয়ম শৃঙ্খলয় আবদ্ধ হবে। শিশুরা ভগবানের রূপ, এই সময়ে তাদের যেদিকে নেওয়া যায় সেদিকেই যাবে। বনগাঁ থেকে আরও খেলোয়াড়েরা কলকাতায় দাপিয়ে খেলুক আমি চাই।

















