অশোকনগরে পুরোহিত সম্মেলনে মহিলা পুরোহিতকে কটুক্তি যুবকের
দাবদাহ লাইভ, বারাসাত, নিজস্ব সংবাদদাতা: ২৪ নভেম্বর অশোকনগর- কল্যাণগড় পুরোহিত চেতনা কল্যাণ সমিতির আয়োজনে মহতী পুরোহিত মিলনোৎসব অনুষ্ঠিত হয় অশোকনগরের চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান গৃহে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন পন্ডিত অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন রাধাগোবিন্দ চক্রবর্তী, রাজু ভট্টাচার্য, অনন্ত চক্রবর্তী সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বিশিষ্ট পণ্ডিতবর্গরা। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন এলাকার কিশোরী পুরোহিত গায়ত্রী ব্যানার্জিও। বছর তিনেক পূর্বে গায়ত্রীর ঘটা করে উপনয়ন কার্য অনুষ্ঠিত হয়। এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক মাধ্যমে এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ঝড়ও ওঠে। এলাকার মহিলা পুরোহিত হিসেবে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গায়ত্রী ডাকও পান। সম্প্রতি এলাকার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অশোকনগর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোয় তিনি পৌরোহিত্যও করেন। ২৪ নভেম্বরের পুরোহিত সম্মেলনে হঠাৎই ওই কিশোরীর উপস্থিতিতে রানাঘাট শিমুরালি থেকে আগত পন্ডিতপ্রবর, মহাত্মন রাজু ভট্টাচার্য কিশোরীকে লক্ষ্য করে মহিলাদের দ্বারা পূজো করা অশাস্ত্রীয় বলে প্রেস বিবৃতি দেন এবং মহিলাদের ‘ওঁ’ মন্ত্র উচ্চারণের ব্যাপারেও তিনি ছিলেন খড়্গহস্ত। এখানেই শেষ নয়, রাজুবাবু গায়ত্রীর মা-কে লক্ষ্য করে একই কথার বারংবার পুনরাবৃত্তি করে তাঁকেও অপমানিত করেন। ঘটনায় উপস্থিত পুরোহিতরা অনেকেই ঘটনায় অস্বস্তি বোধ করেন এবং হতবাক হন। আরো অবাক করা কাণ্ড হলো অনুষ্ঠানে উপস্থিত অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজুবাবু তাঁর শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিলেও শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু এই কিশোরী মহিলা পুরোহিতের সমর্থনে আশীর্বাদ প্রদান করে কিশোরীর মুখে সাবিত্রী মন্ত্র শুনবার আগ্রহ প্রকাশ করলে কিশোরী তা অবলীলায় আবৃত্তি করে। উপস্থিত পুরোহিত রত্ন রাধা গোবিন্দবাবুও এই মহিলা পুরোহিতের সমর্থনে তার যথাযথ বক্তব্য ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সাধুবাদ জানান। এখানেই শেষ নয়, অভিযোগ পুরোহিত সংগঠনের সম্পাদক মিলন আচার্য এ বিষয় নিয়ে রাজুবাবুকে ক্ষান্ত করবার চেষ্টা করলেও পুরোহিত চুড়ামনি হুজুর রাজুবাবু তাঁর নিজ ফতোয়ায় অবিচল থেকে সভা মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে মদত যোগান। যদিও উপস্থিত সকলে বিষয়টি সযত্নে এড়িয়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি রাজুবাবু সম্পর্কে শিমুরালিতে তাঁর এলাকায় খোঁজখবর নিলে এলাকাবাসীরা রাজুবাবুর পৌরোহিত্য বা পাণ্ডিত্য ডিগ্রি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেন। ঘটনা প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সমাজ সেবক নারায়ণ রাহা জানান, রাজুবাবুদের মত ধর্মের সাঁড়েরা মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিজাণু সযত্নে লালন, পালন ও বহন করছেন। পূর্বের নারকীয় কিছু প্রথা যেমন- স্তনকর, সতীদাহ ও বাল্যবিবাহের মতন কু-প্রথার যোগ্য উত্তরসূরী তাঁকে বলা বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। ভাবতে অবাক লাগে, আজ বিশ্বায়নের যুগে নারী স্বাধীনতা, সংরক্ষণ নিয়ে আমরা চিৎকার করলেও এ সমাজ থেকে এই হীনতা এখনো দূর করা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের নরকের কীটদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিশোরীর পিতা তারকনাথ ব্যানার্জির বক্তব্য— যথাবিহিত শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুন মেনেই পণ্ডিতের আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়েই কন্যার উপনয়ন কার্য সমাধা করেছি। এ বিষয়ে বহু বাধা পেরিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। এলাকায় মেয়েকে পুরোহিত হিসেবে মানুষ সম্মান করে- এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। এ পরিপ্রেক্ষিতে একটা কথাই বলবো রাজুবাবুদের মত মানুষদের শুভ বোধোদয় হোক। পুরোহিত সম্মেলনে মঙ্গলদীপ প্রজ্বলন, গণেশ পুজো এবং পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপরে একে একে চণ্ডীপাঠ, গীতা পাঠের পাশাপাশি চলে বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা। পন্ডিত অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় পৌরোহিত্য কর্মের জন্য সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বিশেষ ভাবে ব্যক্ত করেন। সমিতির আমন্ত্রণে এই মহতী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অশোকনগরের বিধায়ক তথা জেলার সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী । তাঁর আবেগমন্ডিত শ্রীশ্রীচন্ডী’র স্তোত্র পাঠে উপস্থিত সকলেই মুগ্ধ হন। এছাড়াও বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভার পৌরপ্রধান প্রবোধ সরকার, উপ পৌরপ্রধান ধীমান রায়, সিআইসি সদস্য শ্রীকান্ত চৌধুরী, কৃষ্ণা চক্রবর্তী, কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ সাহা, প্রাক্তন সিআইসি সদস্য অনুপ রায় প্রমুখ। বিকালে পুরোহিত সমিতির পক্ষ থেকে এলাকার দুস্থ মানুষদের মধ্যে বস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করা হয়। শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, মিলন আচার্য, নিতাই আচার্য, বিপ্লব চক্রবর্তী, রাজা চক্রবর্তী , তারক ব্যানার্জি, প্রদীপ ব্যানার্জি, রঞ্জিত মুখার্জি, মিন্টু গোস্বামী, সত্যজিৎ ভট্টাচার্য, নব্যেন্দু পানিগ্রাহী, কিশোর ভট্টাচার্যের মতো পুরোহিতদের নিরলস আন্তরিক সহযোগিতায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

















